৯টি মামলায় জামিন, তবু এখনই মুক্তি নয় মির্জা ফখরুলের

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পল্টনে গত ২৮শে অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা নয়টি মামলায় শহরের সিএমএম আদালতে জামিন পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তবে, এখনই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি মিলবে না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
এ দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানার আরেকটি মামলায় তাকে জামিন দেয়নি হাইকোর্ট। এ মামলায় এর আগে বিচারিক আদালত জামিন না দিলে হাইকোর্টে জামিন চাওয়া হয়।
এছাড়া, বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, শাহজাহান ওমর, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাহবুব উদ্দিন খোকন-সহ শীর্ষস্থানীয় সব নেতার বিরুদ্ধেই ২৮শে অক্টোবরের ঘটনায় নাশকতার মামলা হয়।

মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন
হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচবার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।
ওইদিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর, নাশকতা ও পুলিশ হত্যার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন ও রমনা থানায় মোট ১১টি মামলা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে ৭৩ দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি নেতাদের আইনজীবীদের অভিযোগ, “১১টি মামলা করলেও গ্রেপ্তারের সময় মির্জা ফখরুলকে মাত্র একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তখন এক আদালত থেকে জামিন পেলে আবার আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখাবে।”
“অর্থাৎ এক আদালত থেকে আরেক আদালতে ঘুরতে থাকতে হবে। আইনি প্রক্রিয়াকে কীভাবে অপব্যবহার করা যায় এটা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সরকার তাকে দীর্ঘমেয়াদী কারাগারে রাখার জন্য এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করছে।”
ওই আইনজীবীরা আরও বলছেন, “পরে হাইকোর্টে আবেদন করে বিচারিক আদালতকে সবগুলো মামলার জামিন শুনানি করতে নির্দেশনা নিতে হয়েছে। এভাবে সময় ক্ষেপণের প্রক্রিয়া করছে সরকার।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বুধবার দুপুরে সিএমএম আদালতে পল্টন ও রমনা থানার নয়টি মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলামের জামিন আবেদনের শুনানি হয়।
প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী এ শুনানিতে তার আইনজীবী আসাদুজ্জামান নয়টি মামলার এজাহার ধরে বিশ্লেষণ করেন।
তিনি আদালতকে বলেন, “এসব মামলায় সুনির্দিষ্টভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। ঘটনা ঘটার স্থান এবং সময় প্রত্যেকটা মামলায় একই ধরনের। মনগড়াভাবে তাকে আসামি করা হয়েছে।”
“সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ থাকতে হবে, এজাহারে বলতে হবে কোথায়, কখন, কীভাবে কী করেছে”, শুনানিতে বলেন মি. আসাদুজ্জামান।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এক আসামির জামিন আদেশের রেফারেন্স টেনে তিনি জামিনের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “আইনানুযায়ী বয়স ও অসুস্থ বিবেচনায় তার জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।”
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শুনানি দ্রুত শেষ করতে তাগাদা দেন। তখন আদালত বলেন, “শুনানি করতে দেন।”
এ সময় আদালতের এজলাসে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ভিড় ছিলো।
এর আগে মঙ্গলবার মির্জা ফখরুলকে সিএমএম কোর্টে হাজির করা হলে এই নয়টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আদেশ দেয় আদালত।
গত ২৯ শে অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তারের পর দিন পল্টন থানার একটি মামলায় ঢাকার সিএমএম মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালত এবং হাইকোর্টে তিন দফায় জামিন আবেদন খারিজ হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর যত মামলা
নাশকতা, পুলিশ-হত্যা ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগে রমনা ও পল্টন থানায় দশটি মামলা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
গত তেসরা নভেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
দশটি মামলার মধ্যে একটি মামলায় হাইকোর্টে ও আরেকটি মামলায় সিএমএম কোর্টে জামিনেরআবেদন করা হয়েছে।
তার আইনজীবী সগির হোসেন লিওন জানান, “হাইকোর্ট বাকি আটটি মামলায় জামিন আবেদন গ্রহণ করে তা নিষ্পত্তি করতে সিএমএম কোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে।”
“সরকার বিচারিক প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে একেকজনের বিরুদ্ধে অনেক মামলা থাকলেও গ্রেপ্তারের সময় আদালতে মাত্র একটি মামলায় হাজির করে”, জানাচ্ছেন তিনি।
“যাতে জামিনের আবেদন একটিতে হয়। ফলে বাকি সব মামলায় জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবার রিট করে বিচারিক আদালতকে নির্দেশনা নিতে হয়েছে বেশির ভাগ বিএনপি নেতার মামলায়” বলছিলেন সগির হোসেন লিওন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস
মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আটটি মামলা
নাশকতা ও পুলিশ হত্যাসহ নানা অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহজাহানপুর, রমনা, পল্টন ও কমলাপুর রেলওয়ে থানায় আটটি মামলা হয়েছে।
এসব মামলায় এরই মধ্যে হাইকোর্টে একটি ও সিএমএম কোর্টে আরেকটি মামলায় জামিনের আবেদন করা হয়েছে।
হাইকোর্টে আগামী সপ্তাহে জামিন আবেদনের শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
বাকি মামলাগুলোতেও একটা পর একটা আবেদন করা হবে।
গত ৩১শে অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এসব মামলা ছাড়াও দুদকের করা দুর্নীতির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশ করেছিল বিএনপি।
ওই সমাবেশের পর সংঘর্ষের বিভিন্ন ঘটনায় পর দিনই ২৮টি মামলা হয়।
এসব মামলায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় বেশির ভাগ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। একেকজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা, পুলিশ হত্যা, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়া, হাসপাতালে আগুনসহ নানা অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে।
গ্রেপ্তার হন বিএনপির মহাসচিব-সহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
পরদিনই সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপি। পরে আরো কয়েক দফায় হরতাল ডাকা হয়। সাতই জানুয়ারি ভোটের দিনসহ ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে বিএনপি।-বিবিসি বাংলা
এবিসিবি/এমআই