করিডর-বন্দর দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়, সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় সংসদ: তারেক রহমান

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য ‘মানবিক করিডর’ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়, এসব বিষয়ে নির্বাচিত সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে শনিবার (১৭ মে) রাতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘জুলাই হতাহতদের তালিকার চেয়ে করিডর দেওয়া কিংবা বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়াকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার। কিন্তু করিডর বা বন্দর দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ। এই সরকারের আইনগত দিক নিয়ে প্রশ্ন নেই। তবে তারা কখনোই জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার নয়।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে আসছে। সরকার কিন্তু সেই আহ্বানে সেভাবে সাড়া দেয়নি। সরকার জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা না করে সুকৌশলে অল্প সংস্কার, বেশি সংস্কার এ ধরনের একটি অভিনব শর্তের বেড়াজালে আটকে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘সরকার জনগণের ভাষা, আশা-আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে। আমরা মনে করি, দেশে এভাবে অস্থিরতা বাড়তে থাকলে এই সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাঁদের সক্ষমতা সম্পর্কে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাই।’
পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারেক।
এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির পর রাজস্ব খাতে বিরাজমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনবিআর সংস্কার নিয়ে তেমন কোনো দ্বিমত নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা না করে তড়িঘড়ি করে সংস্কার শুরু করায় হিতে বিপরীত হয়েছে। নিয়মিত রাজস্ব আদায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে চলতি বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন, দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক নয়। সরকার ব্যাপক আয়োজনে বিনিয়োগ সম্মেলন করলেও কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আসেনি। দেশে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জনগণের ভোটে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মোমিনুল আমিন, উচ্চ পরিষদ সদস্য পারভেজ খান। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ বিভিন্ন দলের নেতা এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবের বীর যোদ্ধাদের সম্মাননা এবং শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের জন্য দোয়ার আয়োজন করা হয়।
-ইত্তেফাক