Type to search

Lead Story আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়াল

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন থামার কোনো আলামতই দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা ও ক্ষোভ সত্ত্বেও বেসামরিক স্থাপনায় দিনরাত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৬ দিনের হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। .

গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার অন্তত ৩২০টি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সেগুলো ধূলিসাৎ করে দিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলায় আরো ৪৩৬ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮২ জন শিশু। বিধ্বস্ত ভবন এবং হাসপাতালগুলোতে কেবল মানুষের আহাজারি।

এদিকে ইসরায়েল গতকাল গাজায় সীমিত পরিসরে স্থল অভিযান চালিয়েছে। হামাস যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটে। পরে বিমান হামলা জোরদার করে। এই বর্বরতার বিরুদ্ধে আরব বিশ্বে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হলেও তাতে কান দিচ্ছে না ইসরায়েলি প্রশাসন। বরং ঘোষণা দিয়ে গাজা ভূখণ্ডে হামলার মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস ও ইসলামিক জিহাদ নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের অভিযান চলছে।

কিন্তু তাদের দাবির সঙ্গে গাজার বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। হামাস যোদ্ধারা হতাহত হচ্ছে কি না সেটা জানা না গেলেও বেসামরিক নারী-পুরুষ-শিশু মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। গাজার চারদিকে কেবল ধ্বংসযজ্ঞ আর লাশের গন্ধ। জাতিসংঘ বলেছে, বেসামরিকদের খাবার, পানি ও বিমান হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো নিরাপদ স্থানের অভাব রয়েছে। মিসর থেকে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে কিছু ত্রাণ প্রবেশ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম।

বেসামরিকদের সুরক্ষার আহ্বান: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে নেতারা ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার’ অধিকারের প্রতি সমর্থন জানালেও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও বেসামরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, বাইডেন রবিবার ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ: মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে গাজায় পরিকল্পিত স্থল অভিযান পিছিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এ কথা বলা হয়েছে। গাজায় হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি এবং উপত্যকায় জীবনরক্ষাকারী ত্রাণের প্রবেশের সুযোগ রাখতে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, পেন্টাগন প্রধান লয়েড অস্টিন প্রায় প্রতিদিন ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনালাপ করছেন। তাদের আলোচনায় ইসরায়েলকে সামরিক সহযোগিতা ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা মোতায়েন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি জিম্মিদের মুক্ত করাকে অগ্রাধিকার হিসেবে তুলে ধরেছেন।

‘যুদ্ধবিরতি’ হবে না: ইসরায়েলের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় জিম্মিদের মুক্তির শর্তে কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না। তিনি আরো বলেন, গাজায় হামাসের হাতে আটক দুই শতাধিক জিম্মিকে মুক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে যাব না। তবে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল জিম্মিদশার দ্রুত অবসান ঘটাতে চায়।

লেবাননে রাতভর হামলা: গাজা ছাড়াও রবিবার রাতভর দক্ষিণ লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। চলমান সংঘাত পর্যালোচনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার শীর্ষ জেনারেলসহ যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নাম না প্রকাশের শর্তে ইরানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানান, ইরানের কৌশল হবে হিজবুল্লাহর মতো বাহিনীগুলোকে সীমিত আকারে ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে উত্সাহ দেওয়া। তবে ইরান এই সংঘাতে সরাসরি যুক্ত হবে না। সোমবার ভোরে ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহর দুই অবস্থানে বিমান হামলা চালায়। এই দুই অবস্থান থেকে ইসরায়েলের দিকে ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল হিজবুল্লাহ। এজন্য লেবানন সীমান্তের গ্রামগুলো থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। যদি হিজবুল্লাহর সঙ্গে হামাসের মতো যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল, তাহলে এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। একদিকে হামাস, অন্যদিকে হিজবুল্লাহ অন্ততপক্ষে এই দুটি ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হবে ইসরায়েলকে।

মধ্যপ্রাচ্যে ছয় যুদ্ধজাহাজ পাঠাল চীন: ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে ছয়টি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে চীন। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো  যুদ্ধজাহাজের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ জিবোও রয়েছে। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর চীনা সেনাবাহিনীর এসব যুদ্ধজাহাজ অজ্ঞাত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে মাস্কাট উপকূল ছেড়ে যায়।

হামাস-ইসরায়েল অস্ত্রবিরতির জন্য প্রয়োজনীয় সব চেষ্টাই করবে চীন। এ কথা জানিয়েছেন দেশটির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ঝাই জুন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আলোচনার পথ তৈরি। অস্ত্রবিরতি ও শান্তি পুনরুদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে চায় বেইজিং। সোমবার চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত বিবৃতিতে গাজার পরিস্থিতিকে অত্যন্ত ভয়ংকর বলে আখ্যা দেন তিনি। সংঘাত প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা জানান।

এবিসিবি/এমআই

Translate »