অস্ট্রেলিয়ায় ভূমিধস জয়ে প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তন

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়ে আবারো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন মধ্য বামপন্থী লেবার পার্টির অ্যান্থনি আলবানিজ।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী তার দল প্রতিনিধি পরিষদের ৮৫ আসনে জয় নিশ্চিত করতে যাচ্ছে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ৭৬ আসন। অন্যদিকে লিবারেল ন্যাশনাল কোয়ালিশন ৪১ আসনে জয় পাচ্ছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। আর গ্রিনরা এখনো কোন আসন পায়নি।
নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ভোটগণনা এখনো শেষ না হলেও আলবানিজের মধ্য-বামপন্থী সরকার নাটকীয়ভাবে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়িয়েছে এবং কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন দেশজুড়ে বড় পরাজয়ের মুখে পড়েছে।
“আজ অস্ট্রেলিয়ার মানুষ অস্ট্রেলিয়ান মূল্যবোধের পক্ষে ভোট দিয়েছে: সবার জন্য ন্যায্যতা, প্রত্যাশা ও সুযোগ; বৈচিত্রতা ও মানবিকতার জন্য সাহস দেখানোর শক্তি,” আলবানিজ বলেছেন।
কোয়ালিশন নেতা পিটার ডাটন তার চব্বিশ বছরের আসনে পরাজিত হয়েছেন। তিনি তার দলের পরাজয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে দলীয় এমপিদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
নির্বাচনের ফল সামনে আসার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও উভয়েই বলেছেন যে, তারা অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছেন।
তবে আলবানিজকে প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছেন পাপুয়া নিউগিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে। মি.আলবানিজ নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার এবারের নির্বাচনের পাঁচ সপ্তাহের প্রচারণার সময় জীবন যাত্রার ব্যয় বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা ও গৃহায়ন খরচ বড় ইস্যু হয়ে ওঠেছিলো।
নির্বাচনের প্রধান দুই নেতা- অ্যান্থনি আলবানিজ ও পিটার ডাটন তীব্র লড়াইয়ের জন্য পরস্পরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
উভয় নেতাই পরস্পরের প্রশংসা করেছেন ও একে অন্যকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ভোটগণনা কখন শেষ হবে
ভোটগ্রহণ শেষ হবার কয়েক ঘণ্টা পরই ফল যে আলবানিজের পক্ষে যাচ্ছে তা পরিষ্কার হয়ে যায়, যদিও সব ভোটগণনা এখনো শেষ হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ান ইলেকশন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনের রাতে দুই থেকে আড়াই কোটি ব্যালট পেপার ম্যানুয়াল পদ্ধতি গণনা করা হয়েছে।
আগামী কয়েকদিনে (সপ্তাহও হতে পারে) এই গণনা কার্যক্রম শেষ হবে। দেশটির প্রতিনিধি পরিষদ নির্বাচনের ভোটগণনা কার্যক্রমে দ্বিতীয়বার গণনা করা বাধ্যতামূলক।
যে কারণে এখানে দ্রুত গণনা সম্পন্ন করার আর কোন উপায় নেই। এজন্যই এবারের নির্বাচনের চূড়ান্ত গণনা কখন শেষ হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
জয়ের পর সিডনিতে আলবানিজ
নির্বাচনে জয়ের পর রাতেই প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজকে প্রকাশ্যে দেখা গেছে। তিনি সিডনিতে তার নির্বাচনি এলাকা সংশ্লিষ্ট একটি ক্যাফেতে স্থানীয়দের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
“অস্ট্রেলিয়ার মানুষ বিভাজন নয়, ঐক্যের জন্য ভোট দিয়েছে,” সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন তিনি।
তিনি বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে উষ্ণ অভিনন্দন পেয়েছেন বলেও জানান।
যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন কখন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার কাজ এখানে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় স্বার্থকে তুলে ধরা”।
শহরে লিবারেলদের ব্যাপক পরাজয়
শহর এলাকায় এবার বড় ধরনের পরাজয়ের মুখে পড়েছে দ্যা লিবারেল পার্টি। বিশেষ করে মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিজবেন ও অ্যাডেলেইডের মতো বড় শহরগুলোতে দলটির প্রার্থীরা হেরে গেছেন।
লিবারেল এমপি কেইথ ওলাহান শহরের মানুষের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলেছেন। বিশেষ করে কর্মজীবী নারী ও তরুণরা গৃহায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
” আমরা যেই শহরগুলোতে বাস করি সেগলোকে আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে,” বলেছেন তিনি।

‘ট্রাম্প ইফেক্টে’ হার পিটার ডাটনের
নির্বাচনে বিস্ময়করভাবে পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই আবারো জয় পেয়েছেন অ্যান্থনি আলবানিজ। কিন্তু এটি আসলে পিটার ডাটন ও তার লিবারেল ন্যাশনাল কোয়ালিশনের জন্য বড় পরাজয় নিয়ে এসেছে।
প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছিলো ডাটন প্রধানমন্ত্রী আলিবানিজের চেয়েও ভালো অবস্থায় রয়েছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
কিন্তু নির্বাচনে প্রচারণা জোরদার হওয়ার পর এ সুবিধাজনক অবস্থান হারিয়ে যেতে থাকে, যার চূড়ান্ত পরিণতি হলো নির্বাচনে লজ্জাজনক পরাজয়।
অনেকেই এর কারণ হিসেবে ‘ট্রাম্প ইফেক্টে’র কথা বলেছেন। কারণ দেশটিতে তাকে অনেকেই মনে করেন ‘অস্ট্রেলিয়ার ট্রাম্প’ হিসেবে।
-বিবিসি বাংলা নিউজ