বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে, তারা ঘৃণ্য: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত যেন বৃথা না যায়। যে স্বপ্ন বুকে নিয়ে জাতির পিতাকে ঘাতকের বুলেটে জীবন দিতে হয়েছে, সেই স্বপ্ন পূরণে সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দেশের মানুষের কল্যাণে তিনি কাজ করে যাবেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট সকল শহীদদের স্মরণে শুক্রবার (১৪ আগস্ট) ৫০ হাজার বার পবিত্র আল কোরআন খতম উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজ কল্যাণ অধিদফতর।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা শোক সইতে পারে না মানুষ। আর আমরা কি সহ্য করে আছি শুধু একটা চিন্তা করে যে, এই দেশটা আমার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এদেশের মানুষের ভাগ্য তিনি পরিবর্তন করতে চান। কাজেই যতটুকু আমার সাধ্য, সেইটুকু করে দিয়ে যাব আমরা যেন তার আত্মাটা শান্তি পায় এবং এই রক্ত যেন বৃথা না যায়।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধু যারা হত্যা করেছে, তারা ঘৃণ্য। তাদের বিচার করেছি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সেই শক্তি দিয়েছেন। ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে দিয়ে বিচার করতে পেরেছি তাদেরকে। এতে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।
আওয়ামী লীগকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রেখে দেশসেবার সুযোগ করে দেওয়ায় দেশের জনগণের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন এবং আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনকে, যারা সব সময় আমার পাশে থেকে শক্তি জুগিয়েছে আমাকে, একটা পরিবারের মত আমি পেয়েছি। শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির জনক আজীবন সংগ্রামের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস আমাদের। জাতি হারিয়েছে তার নেতাকে, আর আমরা হারিয়েছি, আমার ছোট বোনটি এবং আমি, সেই সাথে আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্য, হঠাৎ একদিন আমরা আপনজনদের হারিয়েছি।’
মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ সময়ের মধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি শিশু পরিবারের এতিম শিশু ৮৫টি এবং ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত ৩৯২৮টি প্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক এতিম শিশুদের মাধ্যমে বর্ষব্যাপী এক লক্ষ বার পবিত্র আল কোরআন খতমের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ১৫ আগস্টের মধ্যে ৫০ হাজার বার পবিত্র আর কোরআন খতম হয়ে গেছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত সরকারি শিশু পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছোটবেলা থেকে তোমাদের বাবা-মাকে দেখতে পাওনি তোমরা। অনেকে পিতাকে পাওনি, বা মাকে পাওনি অথবা আবার অনেকে কাউকেই পাওনি। কারো আদর, ভালোবাসা সেটা যে কি জিনিস, সেটা উপলব্ধি করতেই পারোনি তোমরা।’
ঘাতকের বুলেটে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হারানো এতিমদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা যেন কখনও নিজেদের অসহায় মনে না করে, কারণ সব সময় তাদের পাশেই আছেন তিনি। এতিমদের কষ্ট কেমন, তা নিজে উপলব্ধি করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা এই কষ্টটা বুঝি। এই কষ্টটা আরো বুঝলাম ১৫ আগস্ট। একদিন সকালে উঠে যখন শুনলাম আমাদের পরিবারে কেউ নেই।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই নির্মম হত্যাকাণ্ড যখন চলছিল, তখন দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর ২ কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এরপর ৬ বছর তাদের নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মায়ের লাশও দেখতে পাইনি আমরা। কবরটাও জিয়ারত করতে পারিনি এবং দেশে আসতেও পারিনি। এভাবে আমাদের বাইরে পড়ে থাকতে হয়েছিল।
অন্য প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, হিজড়া এবং বিভিন্ন অনগ্রসর জাতিকেও সহযোগিতা করছি আমরা। হিজড়াও তো কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। কেন দূরে ঠেলে দেয়া হয় তাদের, কেন তাদের রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হয়। তারাও পরিবারের সন্তান, তারাও বড় হবে পরিবারেই।
এ অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
আর সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ উদ্দিন খান খসরু এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জয়নুল বারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিভিন্ন এতিম খানা ও সরকারি শিশু পল্লী থেকে শিশুরা মোনাজাতে অংশ নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহন নেন।