সরকারি চাকরির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের বাদামতলায় এসে তারা জড়ো হন কর্মচারীরা। পরে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে তারা এই জমায়েত করেন।
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদনের প্রতিবাদে সচিবালয়ের ভেতরে গতকাল রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ-মিছিল করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। তারা এই অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এর আগে, গতকাল রোববার ২৫ মে সকাল ১০টায় সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর ও মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি পুরো সচিবালয় প্রদক্ষিণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে এসে অবস্থান নেয়।
বিক্ষোভ করছেন কর্মচারীরা
জানা গেছে, সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের দমন নিপীড়নের জন্য যে বিবর্তনমূলক ‘কালোআইন’ প্রণয়ন করেছে। সে আইন বাতিল করাসহ কর্মচারীদের রেশন ও সচিবালয় ভাতা চালুর দাবীতে এই বিক্ষোভ।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়ারা বলেন, কালাকানুন যুক্ত করে প্রণীত অধ্যাদেশ কেউ মানবে না। ১৯৭৯ সালের সরকারি চাকরির বিশেষ বিধান ইতোমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করেছেন। এই বাতিল বিধান পুনরুজ্জীবিত করার মানে নতুনভাবে বিতর্ক তৈরি করা। বর্তমান সরকার সেই কাজটিই করেছে। এর ফলে কর্মচারীদের অধিকার খর্ব হবে, তারা কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়বে। কাজেই এই অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে। অন্যথায় যে কোনো মূল্যে এটা প্রতিহত করা হবে। প্রয়োজনে তারা আইন মন্ত্রণালয়ের সব রুমে তালা দেবেন বলে ঘোষণা করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে
অধ্যাদেশে যা আছে
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন। অধ্যাদেশে এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে, দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া, চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত করার দণ্ড দেওয়া যাবে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। আর অভিযুক্ত কর্মচারীকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে কেন দণ্ড আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে দণ্ড আরোপ করা যাবে। এভাবে দণ্ড আরোপ করা হলে দোষী কর্মচারী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা যাবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ১৫ লাখের মতো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। আইন অনুযায়ী সবাই কর্মচারী।
-যুগান্তর