বাদ যাচ্ছে শেখ হাসিনার পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতা

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া ২০টি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বাদ যাচ্ছে শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম। এর অধিকাংশই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার নামে নিয়েছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এসব নাম ব্যবহার করে ওই সময়ে প্রকল্পের দ্রুত অনুমোদন, পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেওয়া, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করা সহজ ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব নাম গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছিল। এখন নামবদলের কারণে প্রকল্পগুলো বন্ধের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় নাম বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, এর নেপথ্যের সাইকোলজি ছিল শেখ পরিবারের নাম থাকলে প্রথমত প্রকল্প অনুমোদন পাওয়া সহজ হতো। এ ছাড়া প্রস্তাবিত কম্পোনেক্টগুলো কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করা হতো না। পাশাপাশি বাস্তবায়ন পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও পার পাওয়ার সুযোগ ছিল। সব মিলিয়ে বলা যায়, শেখ পরিবারের নাম থাকায় চুরিচামারির সুযোগ হতো। গত ১৫ বছরে একজন ব্যক্তির (বঙ্গবন্ধু) নামে সারা দেশে যত প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে সেটি ‘অডলুক’ ছিল। সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, প্রকল্পের নাম দেওয়াটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যাপার ছিল। কিন্তু এসব নামের কারণে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বাছাই বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে আমি যখন ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য হিসাবে দায়িত্বে ছিলাম, তখন প্রকল্পে যাচাই-বাছাইয়ের নামের গুরুত্ব ছিল না।
একনেকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেখ হাসিনা জাতীয় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি স্থাপনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পে শুধু শেখ হাসিনার নাম বাদ যাচ্ছে। শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রকল্পে শেখ হাসিনার স্থলে হবিগঞ্জ যুক্ত করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা স্থাপনের প্রণীত মহাপরিকল্পনার আওতাধীন ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নসহ মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে শেখ হাসিনার স্থলে খুলনা যুক্ত হচ্ছে। শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী নির্মাণ প্রকল্পের নাম বদলে করা হচ্ছে জামালপুর শহরের নগর স্থাপত্যের পুনঃসংস্থার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্প। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আওতাধীন মহানন্দা নদীর ওপর শেখ হাসিনা সেতুর সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প থেকে শেখ হাসিনার নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। ঘোনাপাড়া থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ (শেখ লুৎফর রহমান সেতু অ্যাপ্রোচসহ) সড়কাংশ যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের নাম বদল করা হয়েছে। নতুন নামকরণ করা হচ্ছে পিরোজপুর-নাজিরপুর-মাটিরাঙ্গা-পাটগাতী-ঘোনাপাড়া জেলা মহাসড়কের ঘোনাপাড়া থেকে পাটগাতী সেতু অ্যাপ্রোচ পর্যন্ত অংশসহ জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনীর সংযোগকারী সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পে শেখ মুজিবুর রহমানের স্থলে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল যুক্ত হয়েছে। কক্সবাজার জেলার একতাবাজার থেকে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের নাম বদলে করা হচ্ছে কক্সবাজার জেলার একতা বাজার থেকে সাবমেরিন ঘাঁটি পেকুয়া পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ভবন নির্মাণ প্রকল্প থেকে আব্দুল হামিদের নাম বাদ যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নাম বদলে হচ্ছে যমুনা রেল সেতু প্রকল্প।
-যুগান্তর