Type to search

Lead Story রাজনীতি

হেফাজতের ওপর নৃশংসতার এক যুগ

এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ওই দিন রাজধানীজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ৭ জেলায় হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে সহিংসতা ঘটে। ওই সময় সরকারি হিসাব অনুযায়ী পুলিশের সাথে সংঘর্ষে মোট ১৯ জন নিহত হন।

তবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ী শাপলা চত্বরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় হেফাজত ইসলামের ৬১ জন নিহত হন। ওই সময় অধিকার এই রিপোর্ট প্রকাশ করায় আওয়ামী লীগ সরকার অধিকারের তৎকালীন সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান এবং সংগঠনের বর্তমান পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০০৯) এর ৫৭ ধারায় মামলা করে। শাপলা চত্বরের ওই ঘটনার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকাসহ ৭ টি জেলায় হেফাজত ইসলামের বিরুদ্ধে ৫৩ টি মামলা দায়ের করে। এই ৫৩ টি মামলার মধ্যে ৪৯ টি মামলার এখনও কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।

অপরদিকে, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব ঘটনায় সারাদেশে ২২১টি মামলা দায়ের করা হয়। সব মিলিয়ে হেফাজতের সহিংসতার ঘটনায় ২৭০ টি মামলা এখনও রয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো: ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, সম্প্রতি হেফাজত ইসলামের শীর্ষ নেতা মাওলানা মামুনুল হক আদালতে একটি মামলার তালিকা জমা দিয়েছেন। তালিকাটিতে আইন মন্ত্রনালয়ের সলিসিটর শাখার সুপারিশ রয়েছে। ওই তালিকায় হেফাজতের বিরুদ্ধে ঢাকায় দায়ের করা ৪৫ টি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। আমরা আবেদনপত্রটি পেয়ে সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। পরবর্তীতে হেফাজত ইসলামের পক্ষ থেকে আরও ৬/৭টি মামলার তালিকা আমার কাছে দিয়েছে। সেই তালিকাও যাচাই করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে যেসব মামলা প্রত্যাহারে সুপারিশ এসেছে, ওই সব মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে আমরা পিপির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মোট ২২০ টি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আমরা করেছি। এর বাইরে আরও ৫০ টি মামলা রয়েছে যেসব প্রত্যাহারের আবেদন এখনও করা হয়নি।

সূত্র জানায়, শাপলা চত্বরের ওই ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে হেফাজত ইসলামের শীর্ষ নেতাসহ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি হারুন ইজাহার, মাওলানা কামরুদ্দিন, মাওলানা মিজানুর রহমান, শিশুবক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী, মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মুফতি মুনির হুসেন কাসেমী, মুফতি নূর হুসাইন নুরানী, মাওলানা আবদুল মান্নান, মাওলানা দিদারুল আলম ও মাওলানা আজিজুল হক উল্লেখযোগ্য।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কারাবন্দী হেফাজত নেতা-কর্মীদের বেশিরভাগই জামিনে মুক্তি পান। বেশ কয়েকজন এখনও কারাবন্দী রয়েছেন বলে দাবি করেছেন হেফাজত ইসলামের যুগ্নমহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজত ইসলামের মহাসমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সব নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে হেফাজত যা করার, তা-ই করবে।’

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, শাপলা চত্বরে আমাদের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তার জন্য দায়ী তৎকালীন সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নামাজরত এবং ঘুমন্ত এতিমদের ওপর যেভাবে গুলি চালানো হয়েছিল, সেটি ইতিহাসে একটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আমরা এর জন্য শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার চাই।

শাপলা চত্বরের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে মামলা: হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা (মিস কেস) হয়েছে।

মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকিরা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ও পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম। এদের মধ্যে শামসুল হক টুকু, এ কে এম শহিদুল হক, জিয়াউল আহসান ও মোল্যা নজরুল ইসলাম অন্য মামলায় গ্রেফতার রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বাকি ৫ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

-ইত্তেফাক

Translate »