প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করল মার্কিন সিনেট

ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সর্বসম্মতভাবে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট।
গত মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে পুতিনকে নিন্দা জানানোর প্রস্তাবের পক্ষে ২ দলের সিনেটররা একযোগে ভোট দেন, যা এক বিরল ঘটনা। এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাস পুতিনকে বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
প্রস্তাবে পুতিনের ইউক্রেনে আক্রমণের সিদ্ধান্ত তদন্ত করতে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ভোটাভুটির আগে সিনেটের ডেমোক্রেট দলীয় নেতা চাক শুমার এক বক্তব্যে বলেন, ‘নৃশংসতা’ চালানোর জন্য পুতিনকে জবাবদিহি করতে হবে। প্রস্তাবের প্রস্তাবক রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর লিনজি গ্রাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হবে, আমাদের ব্রিটিশ মিত্র ও অন্যদের সঙ্গে কাজ করে একটি গোয়েন্দা চক্র গড়ে তোলা, যারা যুদ্ধাপরাধে জড়িত রাশিয়ার সরকারি সামরিক ইউনিটগুলো ও তাদের কমান্ডারদের নাম জানাবে।’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনসহ আমেরিকার ১৩ জন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়া। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা স্পুত্নিক জানায়, মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা আমেরিকানরা রাশিয়ায় ঢুকতে পারবেন না। ঐ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যার মধ্যে রাশিয়ার শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার জবাবেই রুশ সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরো যার যার নাম রয়েছে, তারা হলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন, ইউএস চেয়ারম্যান অব দ্য জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ মার্ক মিলি, সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস, হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এবং জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন। পাশাপাশি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রডো, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলেনি জোলি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অনীতা আনন্দের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়া।
ইউক্রেন আক্রমণকে দেশটিকে নিরস্ত্রীকরণ ও ‘নব্য নাতসি মুক্ত করতে’ চালানো ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে অভিহিত করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনকে পুতুল সরকারসহ যুক্তরাষ্ট্রের একটি উপনিবেশ এবং স্বাধীন রাষ্ট্রের ঐতিহ্যহীন একটি দেশ বলে অভিহিত করেছেন পুতিন। ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এ আগ্রাসন ?দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের কোনো দেশে চালানো সবচেয়ে বড় আক্রমণ।
পুতিন বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি : ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের বিকল্প খোঁজা যুক্তরাজ্যের জন্য খুবই সঠিক পদক্ষেপ বলে মনে করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। লিজ ট্রাস বলেন, পুতিন ইউরোপীয় নিরাপত্তা ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছেন এবং ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের সময় ‘ভয়াবহ অস্ত্র এবং ভয়াবহ শক্তি’ ব্যবহার করেছেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তেল ও গ্যাস বিক্রির অর্থ দিয়ে পুতিন তার যুদ্ধাস্ত্রের তহবিল যোগাচ্ছেন এবং আমি বলছি না যে, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সব নীতির সঙ্গে আমরা একমত কিন্তু তারা বিশ্ব নিরাপত্তার ওপর সেইরকম হুমকি তৈরি করেনি, যেভাবে ভ্লাদিমির পুতিন করেছেন।’ লিজ ট্রাস আরো বলেন, ‘যেকোনও মূল্যে’ পুতিনকে থামাতে হবে আর বিশ্ব সত্যিকার যে হুমকির মুখোমুখি হয়েছে সেটি হচ্ছেন তিনি (পুতিন)।
এবিসিবি/এমআই